অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ: কিশোরদের হাঁটু ব্যথার একটি প্রধান কারণ

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ হল একটি প্রচলিত সমস্যা যা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে দেখা যায়। এতে হাঁটুর নিচের অংশে প্রদাহ ঘটে, যা বেশিরভাগ সময় হাঁটু ব্যথার সৃষ্টি করে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই রোগের কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং রোগীকে দেওয়ার সাধারণ পরামর্শ আলোচনা করব। ...

লেখকঃ ডাঃ মাসুদ উর রহমান

October 25, 2024

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ কি?

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ মূলত কৈশোর বয়সীদের হাঁটু ব্যথার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। এটি ঘটে যখন প্যাটেলার টেন্ডন টিবিয়ার সাথে যুক্ত স্থানে প্রদাহ হয়। এই সমস্যা সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময়ে ঘটে, যখন শরীরের বিভিন্ন গঠন যেমন হাড়, মাংসপেশি ও টেন্ডন দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থায় থাকে। এই সময় শারীরিক কার্যকলাপের কারণে হাড় এবং মাংসপেশিতে অতিরিক্ত টান পড়ে, যা অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত যারা দৌড়ানো এবং লাফানোর মতো খেলাধুলায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ anatomy

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের কারণ

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হল:

  • হাড় ও মাংসপেশির দ্রুত বৃদ্ধি: কৈশোরের সময়, শরীরের হাড় এবং মাংসপেশির দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, যা টেন্ডনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
  • শারীরিক কার্যকলাপ: যারা নিয়মিত দৌড়, লাফানো বা অন্যান্য উচ্চ কার্যকলাপ করে, তাদের জন্য এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • অতিরিক্ত প্রেসার: হাঁটুতে বেশি চাপ পড়লে, টিবিয়ার টিউবারকলে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর শারীরিক অভ্যাস: বেশ কিছু এথলেট ও কিশোরদের অস্বাস্থ্যকর শারীরিক অভ্যাস যেমন খেলা শুরু করার আগে সঠিকভাবে ওয়ার্ম আপ না করা, যার ফলে শরীরের পেশিগুলি যথাযথভাবে প্রস্তুত হয় না, এবং কার্যক্রমের পরে যথাযথভাবে ঠান্ডা করা না হলে এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • আঘাত: আগে থেকে হাঁটুতে আঘাত লাগা থাকলে এটি পুনরায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের উপসর্গ

এই রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে:

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজ লক্ষণ
  • হাঁটু ব্যথা: বিশেষ করে টিবিয়ার টিউবারকলে চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • হাঁটু ফুলে যাওয়া: হাঁটুর নিচে বা চারপাশে ফুলে যেতে পারে।
  • শক্ত পেশী: ঊরুর সামনে ও পেছনের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • হাঁটু ভাঁজ করার সময়ে ব্যথা: সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা এবং হাঁটু ভাঁজ করার সময়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • দীর্ঘকাল স্থায়ী হলে কোয়াডিসেপস (পায়ের সামনের বিশেষ মাংসপেশি সমূহ) দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
  • গতিশীলতায় সমস্যা: হাঁটতে গেলে বা দৌড়াতে গেলে গতিশীলতা কমে যাওয়া এবং হাঁটুর জন্য অব্যাহত অস্বস্তি।

চিকিৎসা

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের চিকিৎসায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:

০১ বিশ্রাম:

রোগীর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক সাধারণত রোগীর কার্যকলাপের স্তর কমাতে পরামর্শ দেন।

০২ মেডিসিন:

ব্যথা কমানোর জন্য এনএসএআইডি (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs) দেওয়া যেতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

০৩ ফিজিওথেরাপি:

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে অনেক রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্যথা কমে এবং রোগী দ্রুত দৈনন্দিন কাজে ফিরতে পারে। তবে, সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হওয়ার জন্য ১২ থেকে ২৪ মাস সময় লাগতে পারে, তাই রোগীকে সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করা উচিত।

  • আইস থেরাপি: আক্রান্ত স্থানে বরফ লাগানো ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
  • হিট ও আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে হিট বা আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়।
  • ম্যাসাজ থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ যদি সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করা হয় তবে এটি পেশীর রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

ফিজিওথেরাপি অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগীর পেশী এবং টেন্ডনের শক্তি বাড়াতে, নমনীয়তা বৃদ্ধিতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করেন, যা রোগীর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায়। এছাড়া, তারা রোগীকে হাঁটু সংক্রান্ত সঠিক শরীরী গতি ও অবস্থান সম্পর্কে শিক্ষা দেন।

সাধারণ পরামর্শ

অসগুড স্ক্যাটার ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।

  • শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত করুন: উচ্চ কার্যকলাপ যেমন দৌড়ানো এবং লাফানো কমাতে চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশিত ব্যায়ামগুলি নিয়মিত করুন। বিশেষ করে পেশী ও টেন্ডনের নমনীয়তা এবং শক্তি বৃদ্ধির জন্য তৈরি ব্যায়ামগুলি।
  • হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলুন: সিঁড়ি দিয়ে উঠানামার সময় সাবধান থাকুন। হাঁটু ভাঁজ করার সময় এবং ওঠার সময় সতর্ক থাকুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন যাতে শরীরের পেশী এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
  • সঠিক নিয়ম এবং পন্থায় কাজ করুন: সঠিক টেকনিক ব্যবহার করে খেলাধুলা ও শারীরিক কার্যকলাপ করুন, যাতে হাড় ও পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  • নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়মিত পর্যালোচনা করুন: আপনার অবস্থা উন্নতি হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করুন এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।

সাধারণ সতর্কতা:

  • হঠাৎ করে দৌড়ানো, লাফানো, বা ভারী কাজ করা এড়িয়ে চলুন।
  • ব্যথা থাকাকালীন শারীরিক কাজ সীমিত করুন এবং ফিজিওথেরাপির নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করুন।
  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করুন।
  • ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে উপসর্গ কমে যাওয়ার আশা করা যায়, তবে পুরোপুরি আরোগ্য লাভের আগে ধৈর্য্য ধারণ করা জরুরি।

উপসংহার:

অসগুড-শ্ল্যাটার ডিজিজ কিশোরদের মধ্যে হাঁটু ব্যথার একটি সাধারণ কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। সঠিক চিকিৎসা, বিশ্রাম, এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই যারা এই সমস্যার মুখোমুখি হন, তাদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সঠিকভাবে পুনর্বাসনে মনোযোগী হওয়া।

আপনি যদি এই জাতীয় সমস্যা ফেইস করে থাকেন তবে আস্থা রাখুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। এখানে নিয়মিত চেম্বার করেন ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক।

Masud Ur Rahman best physiotherapist

ডাঃ মাসুদ উর রহমান

বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় আমি একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আমার মূল লক্ষ্য হলো আপনাকে সুস্থভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করা এবং আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য ব্লগ

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোকের পর যে প্যারালাইসিস, কথা বলার সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসা। এই ব্লগে স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ, তাৎক্ষণিক করণীয়, প্রতিরোধের উপায় এবং ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস, যা ডিস্ক হার্নিয়েশন নামেও পরিচিত, একটি প্রচলিত সমস্যা যা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ডিস্ক প্রলাপসের কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং রোগীকে দেওয়ার সাধারণ পরামর্শ আলোচনা করব।

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের একটি ক্ষয়জনিত সমস্যা, যা আমাদের চল্লিশোর্ধ বয়সীদের মাঝে খুবই সাধারণ। এই রোগে ঘাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বাহু, হাত ও আঙুলেও ব্যথা ও অবশ ভাব হতে পারে। সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি হলো মুখের ফেসিয়াল নার্ভের একটি তীব্র প্রদাহজনিত সমস্যা, যা মুখের এক পাশ দুর্বল করে দেয় বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড করে ফেলে। এই রোগ সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বেশি দেখা যায়। সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বেশিরভাগ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো কেবল খেলোয়াড়দের নয়, যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে যারা বারবার হাতের মুভমেন্ট করে থাকেন। কীভাবে এই সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং এর চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কীভাবে উপশম পেতে পারেন তা জানুন।

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পায়ের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত ব্যথা? পা ভারি ভারি বা অবশ লাগছে? হয়তো এটি ডিস্ক প্রলাপস নয়, বরং পাইরিফরমিস সিনড্রোম হতে পারে। এই সমস্যা কীভাবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে উপশম করা সম্ভব তা জানুন।

Pin It on Pinterest

Share This