গোড়ালি মচকানো কী?
গোড়ালি মচকানো (Ankle Sprain) হলো একটি সাধারণ ইনজুরি, যা গোড়ালির লিগামেন্টে আঘাতের কারণে ঘটে। লিগামেন্ট হলো টিস্যুর শক্তিশালী রশ্মি যা হাড়কে একসঙ্গে ধরে রাখে এবং আমাদের শরীরের জোড়াগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। যখন হঠাৎ কোনো মুভমেন্টের ফলে লিগামেন্টে অতিরিক্ত টান পড়ে বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়, তখন গোড়ালি মচকে যায়। এটি সাধারণত দৌড়ানো, লাফানো, বা হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কার্যকলাপের সময় ঘটে। অনেক সময় গর্তে পা ফসকানো, সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে, বা খেলাধুলার সময়ও এটি ঘটতে পারে।
গোড়ালি মচকানোর কারণ
গোড়ালি মচকে যাওয়ার বেশ কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- পায়ের ভারসাম্য হারানো
- গর্তে পা ফসকানো
- ভুলভাবে পা রাখা
- অস্বস্তিকর জুতা পরা
- রিকশা বা বাস থেকে নামার সময় পা ফসকানো।
- শরীরচর্চার সময় সঠিক পদ্ধতি না মেনে ব্যায়াম করা।
লক্ষণসমূহ
গোড়ালি মচকানোর সময় সাধারণত কিছু প্রধান লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলোর তীব্রতা নির্ভর করে লিগামেন্টের ক্ষতির মাত্রার উপর। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- ব্যথা: গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হয়, যা হাঁটাচলা করার সময় বা পায়ে ভর দিলে আরও বেড়ে যায়।
- ফুলে যাওয়া: মচকানোর পরপরই গোড়ালি ফোলা শুরু হয়।
- পায়ের নড়াচড়া কমে যাওয়া: পায়ে নড়াচড়া করতে গেলে ব্যথা বাড়ে এবং পা শক্ত হয়ে আসে।
- আলতো স্পর্শে ব্যথা: মচকানো স্থানে হালকা স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয়।
- অস্বাভাবিক হাঁটা: পায়ে ভর দিলে ব্যথার কারণে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসা পদ্ধতি
গোড়ালি মচকানোর তীব্রতা এবং আঘাতের পরিমাণ অনুযায়ী এর চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত মচকানো ইনজুরির চিকিৎসায় নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
- বিশ্রাম: পায়ে ভর না দিয়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রয়োজনে ক্রাচ ব্যবহার করে হাঁটা যেতে পারে যাতে গোড়ালির ওপর চাপ না পড়ে।
- বরফ সেঁক: মচকানোর পরপরই ফোলা এবং ব্যথা কমানোর জন্য বরফ সেঁক দেওয়া উচিত। দিনে কয়েকবার ১৫-২০ মিনিট বরফের সেঁক ব্যবহার করা উচিত।
- পায়ের অবস্থান উঁচুতে রাখা: ফোলাভাব কমানোর জন্য পায়ের অবস্থান উঁচু রাখতে হবে। পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা উপরে তুলে রাখতে পারেন।
- কমপ্রেশন: ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা অ্যাংলেট ব্যবহার করে গোড়ালিকে সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে।
- ব্যথানাশক ওষুধ: তীব্র ব্যথা হলে প্যারাসিটামল বা ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
- হালকা গরম পানির সেঁক: আঘাতের ৪৮ ঘণ্টা পর কুসুম গরম পানির সেঁক দিলে ব্যথা কমতে শুরু করবে। এখানে খেয়াল রাখা উচিত ব্যথা পাওয়ার পরপর গরম পানির সেঁক দিলে ব্যথা আরও বেড়ে যাবে।
ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
গোড়ালি মচকানোর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে গোড়ালির পেশিগুলোর শক্তি ও কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন ধাপে সাহায্য করে:
- মুভমেন্ট রিস্টোরেশন: গোড়ালির স্বাভাবিক নড়াচড়া ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করানো হয়।
- পেশি মজবুত করা: গোড়ালির পেশিগুলোকে মজবুত করতে স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ করানো হয়, যা পরবর্তীতে পুনরায় মচকানোর ঝুঁকি কমায়।
- ইলেকট্রোথেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরির ক্ষেত্রে UST (আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি) এবং SWT (শকওয়েভ থেরাপি) ব্যবহার করা হয়। এই থেরাপিগুলো পেশির প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- স্প্লিন্ট ব্যবহার: প্রয়োজন হলে গোড়ালির সাপোর্ট হিসেবে এংকেল স্প্লিন্ট ব্যবহার করতে হবে।
সাধারণ পরামর্শ
গোড়ালি মচকানোর পর পুনরায় এ ধরনের ইনজুরি থেকে বাঁচতে কিছু সাধারণ পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত:
- সঠিক জুতা নির্বাচন: দৈনন্দিন জীবনে সঠিক মাপের এবং আরামদায়ক জুতা পরা উচিত। হাই হিল বা অস্বস্তিকর জুতা এড়িয়ে চলা উচিত।
- শরীরচর্চা: গোড়ালির পেশি ও লিগামেন্ট শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। তবে, শরীরচর্চার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
- পায়ের ভারসাম্য বজায় রাখা: হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা এবং পায়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
- পায়ে আঘাত থেকে বিরত থাকা: পায়ে সরাসরি আঘাত লাগা এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে।
উপসংহার
গোড়ালি মচকানো একটি সাধারণ ইনজুরি হলেও, দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় রূপ নিতে পারে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এর সঠিক চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন সম্ভব। সঠিক যত্ন, পেশির শক্তি বাড়ানো এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এই ইনজুরি থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। পা মচকানোজনিত ব্যথা নিরসনে ভিজিট করুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। রংপুরে সর্বাধুনিক এবং দলিল্ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাবেন আমাদের সেন্টারে।
0 Comments