পাইরিফরমিস সিনড্রোম কী?
পাইরিফরমিস সিনড্রোম একটি নিউরো-মাসকুলার কন্ডিশন, যেখানে পাইরিফরমিস মাসল শক্ত হয়ে সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করে। পাইরিফরমিস মাসলটি আমাদের পেলভিসের গভীরে থাকে এবং এর কাজ হলো পায়ের ঘূর্ণন এবং হিপ স্টেবিলিটি বজায় রাখা। যখন এই মাসলটি শক্ত বা তীব্র হয়ে ওঠে, এটি সায়াটিক নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে কোমরের নিচ থেকে পায়ের পেছনে ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথাটি ডিস্ক প্রলাপসের মত মনে হলেও, মূলত এটি পাইরিফরমিস মাসলের কারণে ঘটে।
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের লক্ষণসমূহ:
এই সমস্যার লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি বা তীব্র হতে পারে। রোগীর জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো প্রভাবিত হয়।
- ব্যথার প্রসার: কোমরের নিচের অংশ থেকে শুরু করে পায়ের পেছনের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ঝিনঝিন অনুভূতি ও জ্বালাপোড়া: পায়ে ঝিনঝিন অনুভব হতে পারে এবং কখনও কখনও পায়ের ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে।
- পায়ের ভারি বা অবশ অনুভূতি: রোগীর পা ভারি বা অবশ মনে হতে পারে, যা হাঁটা বা চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করে।
- হাঁটাচলার সময় ব্যথা বাড়া: হাঁটলে বা দৌড়ালে ব্যথা বাড়তে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে। তবে, ব্যথা কখনও কখনও বসে থাকলেও হতে পারে।
- পায়ের দুর্বলতা: রোগী পায়ে দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন, বিশেষ করে চলাফেরার সময়।
- পায়ে টান: পায়ের মাংসপেশীতে টান বা তীব্র সংকোচন অনুভব হতে পারে, যা অনেক সময় হিপ ও কোমরকেও প্রভাবিত করে।
প্রায় একই ধরনের লক্ষণ ডিস্ক প্রলাপসের জন্যও হতে পারে, তাই সঠিক রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুল রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসার সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব নয় এবং রোগীর অবস্থার উন্নতির বদলে ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের কারণ
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের কারণ নির্দিষ্ট কোনো একটি হতে পারে না, তবে বেশ কিছু বিষয় এই সমস্যাকে উস্কে দিতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- ওভার ইউজ বা অতিরিক্ত পরিশ্রম: যদি পাইরিফরমিস মাসল অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়, যেমন দীর্ঘ সময় ধরে দৌড়ানো বা বসে থাকা, তখন এই মাসলটি শক্ত হয়ে সায়াটিক নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- আঘাত: কোমর বা পেলভিসে আঘাত লাগলে পাইরিফরমিস মাসল সংকুচিত হয়ে যেতে পারে।
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে পাইরিফরমিস মাসল শক্ত হয়ে যায়, বিশেষ করে যদি সঠিকভাবে বসা না হয়।
- অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক কার্যকলাপ: সঠিকভাবে শরীরচর্চা না করলে বা ভুল ভঙ্গিতে ব্যায়াম করলে পাইরিফরমিস সিনড্রোম হতে পারে।
- পেলভিক মিসঅ্যালাইনমেন্ট: যদি পেলভিসের স্থানান্তর ঘটে বা কোনো প্রকার অস্বাভাবিক চলাফেরা হয়, তবে পাইরিফরমিস মাসল বেশি চাপের মধ্যে পড়তে পারে।
সঠিক রোগ নির্ণয়ের গুরুত্ব
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের লক্ষণগুলি ডিস্ক প্রলাপসের সাথে মিলে যেতে পারে, তাই এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে রোগটি ডিস্ক প্রলাপস নয়। সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, যিনি রোগের লক্ষণগুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে ফিজিক্যাল পরীক্ষা করবেন। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ পাইরিফরমিস মাসলের জন্যই হচ্ছে কিনা।
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
পাইরিফরমিস সিনড্রোমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মাংসপেশীর শক্তি পুনরুদ্ধার এবং সায়াটিক নার্ভের চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিচের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়:
১. ম্যানুয়াল থেরাপি:
ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে পাইরিফরমিস মাসলকে সরাসরি প্রসারিত (স্ট্রেচিং) ও নরম করা হয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক পাইরিফরমিস মাসলকে টার্গেট করে সেই মাসলকে স্ট্রেচ করেন, যা মাংসপেশীর টান কমায় এবং সায়াটিক নার্ভের উপর থেকে চাপ হ্রাস করে।
২. মাসল এনার্জি টেকনিক (MET):
MET হলো একটি বিশেষ ধরনের থেরাপি যেখানে রোগীর নিজস্ব পেশীশক্তি ব্যবহার করে মাসলকে রিল্যাক্স করা হয়। এর মাধ্যমে পাইরিফরমিস মাসল আরও কার্যকরীভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় এবং নার্ভে চাপ কমানো যায়।
৩. স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ:
নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ রোগীর ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। পাইরিফরমিস স্ট্রেচিং এর মাধ্যমে পেশীর টান কমে যায় এবং নার্ভের উপর থেকে চাপ লাঘব হয়।
৪. আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি (UST):
আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি একটি আধুনিক পদ্ধতি, যা শরীরের গভীরে প্রবেশ করে এবং মাংসপেশীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি পাইরিফরমিস মাসলের টান কমাতে এবং নার্ভের চাপ হ্রাস করতে অত্যন্ত কার্যকর।
৫. সক্রিয় চলাফেরা ও শক্তিশালীকরণ:
ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীকে পায়ের সঠিক শক্তি এবং গতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন। এতে ব্যথার উপশম ঘটে এবং পুনরায় সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
উপসংহার
পাইরিফরমিস সিনড্রোম একটি সাধারণ কিন্তু বেশ কষ্টদায়ক সমস্যা, যা অনেক সময় ডিস্ক প্রলাপসের মতো মনে হতে পারে। তবে সঠিক রোগ নির্ণয় ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপির নিয়মিত ও সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তাই, কোমর থেকে পায়ের দিকে ব্যথা হলে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে রয়েছে ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস, ঘাড় / কোমর / হাটু / গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আপনার পাইরিফরমিস সিনড্রোম সহ অন্য যেকোন শারীরিক সমস্যা সমাধানে ভিজিট করতে পারেন আমাদের সেন্টার।
0 Comments