রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) হলো একটি ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অটোইমিউন রোগ, যা মূলত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই রোগটি সাধারণত বয়সভিত্তিক না হয়ে যে কোনো বয়সে, বিশেষত যুবক ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজ অস্থিসন্ধির বিরুদ্ধে কাজ করে, ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং পঙ্গুত্বের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। এই প্রবন্ধে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিও আর্থ্রাইটিসের মধ্যে পার্থক্য
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিও আর্থ্রাইটিস, উভয়ই জয়েন্টের ব্যথাজনিত রোগ হলেও এর উৎস এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
- অটোইমিউন কারণ: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলো একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলক্রমে জয়েন্টগুলোকে আক্রান্ত করে। অন্যদিকে, অস্টিও আর্থ্রাইটিস সাধারণত বয়সজনিত কারণ বা কার্টিলেজ ক্ষয়ের ফলে ঘটে।
- বয়সের তারতম্য: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সাধারণত ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায় এবং শিশুদেরও এটি আক্রান্ত করতে পারে। অস্টিও আর্থ্রাইটিস সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে হয়।
- আক্রান্ত অস্থিসন্ধি: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে শরীরের উভয় পাশের অর্থাৎ ডান ও বাম দিকের জয়েন্টগুলো সমানভাবে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে, অস্টিও আর্থ্রাইটিসে সাধারণত একটি বিশেষ জয়েন্টে সমস্যা শুরু হয়।
- লক্ষণ: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত জয়েন্টগুলো ফুলে যায়, লাল ও গরম অনুভূত হয়, যা অস্টিও আর্থ্রাইটিসে সাধারণত দেখা যায় না।
- দৈহিক সমস্যা: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস শরীরের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে, শরীর দুর্বল ও অবসন্ন হয়ে যায় এবং ওজন কমতে থাকে। অন্যদিকে, অস্টিও আর্থ্রাইটিস সাধারণত জয়েন্টে সীমাবদ্ধ থাকে।
- সকালবেলা জয়েন্টের রিজিড হওয়া: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে সকালবেলা আক্রান্ত জয়েন্টগুলো দীর্ঘক্ষণ শক্ত থাকে, যা অস্টিও আর্থ্রাইটিসে অল্প সময়ের জন্য ঘটে থাকে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণসমূহ
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ থাকে, যেগুলো রোগের তীব্রতা অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন:
- জয়েন্টে তীব্র ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া।
- জয়েন্টগুলোতে শক্ত হয়ে যাওয়া, বিশেষ করে সকালে বা দীর্ঘক্ষণ বিশ্রামের পর।
- শরীরে সার্বিক দুর্বলতা ও অবসন্নতা বোধ।
- আক্রান্ত জয়েন্টগুলোতে লালচে ভাব এবং উষ্ণতা।
- ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার উদ্দেশ্য
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় মূল লক্ষ্য হলো প্রদাহ কমিয়ে জয়েন্টের কার্যক্ষমতা ধরে রাখা এবং রোগীকে পঙ্গুত্বের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা। এর কয়েকটি মূল উদ্দেশ্য হলো:
- প্রদাহ কমিয়ে জয়েন্টের নড়াচড়া স্বাভাবিক রাখা।
- জয়েন্টের শক্ত হওয়া রোধ করা এবং বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধ করা।
- ব্যথা ও অন্যান্য লক্ষণগুলো যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা।
- ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে জয়েন্ট ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করা।
চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগীর লক্ষণ ও শারীরিক অবস্থা বিচার করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন। মূলত তিনটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:
০১ ঔষধ সেবন:
ব্যথা উপশম ও প্রদাহ কমাতে অ্যানালজেসিক, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস ও ডিজিজ-মডিফাইং অ্যান্টি রিউম্যাটিক ড্রাগস (ডিএমএআরডি) ব্যবহার করা হয়। অনেকে নিমেষে ব্যথা নিরাময়ের আশায় স্টেরয়েডের ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ঔষুধ খেলে কিডনির উপর প্রচন্ড চাপ পড়তে কিডনি একসময় বিকল হয়ে যেতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে ফিজিওথেরাপি।
০২ ফিজিওথেরাপি:
রোগীর দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে ও জয়েন্টের শক্তি ধরে রাখতে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগীদের জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে, ব্যথা কমাতে এবং মাংসপেশির শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
এছাড়া, ফিজিওথেরাপি রোগীদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার সক্ষমতা উন্নত করতে এবং বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধে সহায়তা করে, ফলে তারা তাদের সাধারণ কার্যকলাপ স্বাভাবিকভাবে করতে পারে। সঠিক ফিজিওথেরাপি রোগীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়কেই সমৃদ্ধ করে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন:
- প্রতিদিন ব্যায়াম এবং হালকা স্ট্রেচিং করতে পারেন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টে চাপ সৃষ্টি করে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, বিশেষত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন ও ফিজিওথেরাপি নেওয়া।
উপসংহার
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে রোগের লক্ষণগুলো অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণই হলো এ রোগের প্রধান করণীয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অন্য সকল প্রকার আর্থ্রাইটিস এবং জয়েন্টের ব্যথা চিকিৎসা করার জন্য রংপুর শহরের সেরা ফিজিওথেরাপি সেন্টারটি এখন আপনার হাতের নাগালে। আজই এপোয়েন্টমেন্ট বুকিং করুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে।
0 Comments