সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস কী?
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হলো মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশে (সারভাইক্যাল স্পাইন) হাড়ের ক্ষয়জনিত একটি সমস্যা, যা সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘটে। আমাদের মেরুদণ্ডের প্রতিটি অংশে কিছু গর্ত থাকে, যার মাধ্যমে স্নায়ুগুলো দেহের অন্যান্য অংশে সংকেত প্রেরণ করে। সময়ের সাথে সাথে ঘাড়ের মেরুদণ্ডে অবস্থিত ডিস্ক, হাড় এবং জয়েন্টগুলোতে ক্ষয় হতে শুরু করে, যা থেকে ব্যথা এবং ঘাড়ের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সাধারণত চল্লিশোর্ধ বয়সের মানুষদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
কারণ ও রিস্ক ফ্যাক্টর
- বয়সজনিত ক্ষয়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের ডিস্ক এবং হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায়, যা ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়।
- অতিরিক্ত ওজন বহন করা: ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত ওজনের চাপ পড়লে মেরুদণ্ডের ক্ষয় ত্বরান্বিত হতে পারে।
- দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা: যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম: ভারী কিছু তোলা বা অতিরিক্ত ঘাড়ের মুভমেন্টও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: কিছু মানুষদের মধ্যে জেনেটিক কারণে সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
লক্ষণসমূহ
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং ঘাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বাহু, হাত এবং আঙুলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত এই রোগের লক্ষণগুলো হলো:
- ঘাড়ের ব্যথা: ঘাড়ের পেছনের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়, যা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে।
- কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথা: ব্যথা কাঁধ, বাহু ও হাতের আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ঘাড়ের স্টিফনেস: ঘাড়ের পেশিগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে, মনে হবে ঘাড় জমে আছে এবং নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়।
- হাত ও আঙুলে অসাড় ভাব: বাহু এবং আঙুলের অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঘোরানো: ঘাড়ের ব্যথা মাথা ঘোরানোর সময় বাড়তে পারে, এবং মাথার পিছনে বা কানের পেছনে চাপ অনুভব করতে পারেন।
- মাথা ও ঘাড়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা: ভারী কিছু তোলার পর বা অতিরিক্ত কাজের ফলে তীক্ষ্ণ ব্যথা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের চিকিৎসা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ, ফিজিওথেরাপি এবং জীবনধারায় কিছু পরিবর্তনই যথেষ্ট হয়ে থাকে। নিচে এর চিকিৎসার ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
০১ ফিজিওথেরাপি:
ফিজিওথেরাপি সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ঘাড়ের পেশিগুলোর কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে, ব্যথা কমায়, এবং রোগীর নিত্যদিনের জীবনযাত্রা সহজ করে। সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের জন্য কিছু বিশেষ ধরনের ফিজিওথেরাপি করা হয়, যেমন:
- স্ট্রেচিং ও স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ: ঘাড়ের মাংসপেশি ও জয়েন্টের মুভমেন্ট এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্থেনিং ব্যায়াম করা হয়।
- মাসাজ ও ম্যানুয়াল থেরাপি: পেশিগুলোর রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে ঘাড়ে বিশেষ ধরনের ম্যাসাজ করা হয়।
- ইলেকট্রোথেরাপি: UST (আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি) এবং SWT (শকওয়েভ থেরাপি) সারভাইক্যাল স্পাইনকে আরোগ্য করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলো পেশিগুলোর ফাংশন পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
০২ ব্যথানাশক ওষুধ:
প্যারাসিটামল বা ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে সহায়ক।
০৩ বিশ্রাম:
অতিরিক্ত ঘাড়ের নড়াচড়া এড়িয়ে চলতে হবে এবং প্রয়োজন হলে সারভাইক্যাল স্প্লিন্ট ব্যবহার করতে হবে।
০৪ জীবনযাপনের পরিবর্তন:
দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কাজ না করা, সঠিক পদ্ধতিতে বসা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি।
জীবনযাত্রা পরিবর্তন ও সাধারণ পরামর্শ
- সঠিকভাবে বসা: দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে কাজ করলে অবশ্যই মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে এবং সঠিকভাবে বসা শিখতে হবে।
- শরীরচর্চা: নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে যাতে পেশিগুলো নমনীয় থাকে এবং ক্ষয়ের হার কমে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যাতে মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
- অতিরিক্ত ভারী কাজ এড়িয়ে চলা: অতিরিক্ত ভারী কিছু তোলা বা বেশি পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে।
উপসংহার
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এমন একটি অবস্থা যা সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ফিজিওথেরাপির সাহায্যে এই সমস্যার লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসা সম্ভব। সঠিক জীবনধারা মেনে চলা এবং শরীরের প্রতি যত্নশীল থাকলেই সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এই সমস্যাটি সমাধানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। তাই ভিজিট করুন আমাদের সেন্টার।
0 Comments