মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম (MPS) কী?
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম (MPS) হলো একটি ক্রনিক ব্যথা সংক্রান্ত অবস্থা যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট অংশের মাংসপেশীতে অতিরিক্ত চাপ বা আঘাতের কারণে ব্যথা সৃষ্টি হয়। মজার বিষয় হলো, এই ব্যথা কখনো কখনো খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু এটি খুবই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। সাধারণত এই ব্যথা শরীরের ঘাড়, কাঁধ, পিঠ বা কোমর অঞ্চলে দেখা যায় এবং এটি এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা যা চিকিৎসা ছাড়া সহজে কমে না।
এই রোগের একটি বৈশিষ্ট্য হলো ব্যথার উৎস খুঁজে পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এক্সরে বা এম.আর.আই. করতে গেলেও ব্যথার কোনো নির্দিষ্ট কারণ ধরা পড়ে না। অনেকেই হয়তো ভাবেন, “এত ব্যথা হচ্ছে, অথচ কিছুই ধরা পড়ছে না!”, ঠিক এটাই হলো মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোমের ধাঁধা।
রোগের লক্ষণ:
নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ব্যথাটা পরম আনন্দে বাস করতে থাকবে। সেই স্থানে চাপ দিলে সে হালুম করে উঠবে। ব্যথার উপরের মাংসপেশীগুলো শক্ত হয়ে থাকবে। কারণ ছাড়াই সে স্থানের মাংসপেশি দুর্বল মনে হবে। ব্যথার স্থানে চাপ দিলেও আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হবে। ঘাড় নাড়ানো যাচ্ছে না, কাঁধ নাড়ালেই ব্যথা হচ্ছে, কোমরের অথবা শরীরের নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে বারবার ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। মোটকথা ব্যথাটির বৈশিষ্ট হবে অনেকটা এমন-
- লোকাল পেইনঃ ব্যথা সাধারণত শরীরের নির্দিষ্ট অংশে কেন্দ্রীভূত থাকবে, যেমন ঘাড়, কাঁধ, বা কোমর।
- মাংশপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া: ব্যথার স্থানের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায় এবং চাপ দিলে ব্যথা তীব্র হয়।
- ব্যথার প্রসার: একটানা ব্যথার কারণে শরীরের অন্য অংশেও ব্যথার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- মাংসপেশীর দুর্বলতা: ব্যথার কারণে সেই স্থানের মাংসপেশীতে দুর্বলতা অনুভব হতে পারে।
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোমের কারণ
এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এক কথায় বলা মুশকিল। তবে কিছু সাধারণ কারণ আছে যেগুলো এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে:
- ওভার ইউজ বা অতিরিক্ত পরিশ্রম: কোনো নির্দিষ্ট মাংসপেশী বারবার ব্যবহার করলে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মায়োফেসিয়াল পেইন তৈরি হতে পারে।
- আঘাত: কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের ফলে এই ব্যথা হতে পারে। যেমন, মোটরবাইক চালানোর সময় দুর্ঘটনা।
- অসতর্ক শারীরিক কার্যকলাপ: ভারী জিনিস তোলা, বেকায়দায় বসা বা খেলাধুলার কারণে মাংসপেশীতে চাপ পড়ে এই রোগ হতে পারে।
- মানসিক চাপ: অনেক সময় মানসিক চাপের কারণে শরীরের পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথার উদ্রেক করতে পারে।
কিভাবে মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম নির্ণয় করবেন?
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোমের ডায়াগনোসিস করতে হলে এটি পুরোপুরি একটি ক্লিনিক্যাল প্রক্রিয়া। রোগীর ব্যথার স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং মাংসপেশীর টেন্ডার পয়েন্ট গুলো চিহ্নিত করা হয়। অনেক সময় রোগী নিজেই তার ব্যথার স্থানটি হাত দিয়ে চিনিয়ে দিতে পারেন। যদিও এই রোগের কারণে এক্সরে বা এম.আর.আই.-তে কোনো সমস্যার ইঙ্গিত নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই রুটিন ও সন্দেহজনক মনে হলে নির্দিষ্ট ইনভেস্টিগেশন করা যেতে পারে ফর এক্সক্লুশন। । স্লিপ স্টাডি করেও মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম নির্ণয় করা সম্ভব।
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোমের চিকিৎসা:
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোমের চিকিৎসার জন্য আধুনিক ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. পজিশনাল রিলিজ থেরাপি:
২. মাসল এনার্জি টেকনিক (MET):
৩. ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন (DTF):
৪. কাইনেসিও টেপিং:
৫. ট্রিগার পয়েন্ট রিলিজার
৬. আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং মাসল স্টিমুলেটর:
এখানে লক্ষণীয় যে শুধু ব্যথার ঔষধ খেয়ে এই রোগের সমাধান সম্ভব নয়। ব্যথা কমানোর জন্য সঠিক ও টার্গেটেড ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম হলো এমন একটি অবস্থা যা দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত থাকলে রোগীর দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক সময়ে ফিজিওথেরাপির সাহায্যে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই, শরীরে যে কোনো অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করলে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে রয়েছে ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আপনার মায়োফেশিয়াল সিনড্রম সহ অন্য যেকোন শারীরিক সমস্যা সমাধানে ভিজিট করতে পারেন আমাদের সেন্টার। সর্বাধুনিক এবং দলিল্ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এখন আপনার হাতের নাগালে প্রিয় শহর রংপুরে এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে।
0 Comments