সেভারস্ ডিজিজ কী?
সেভারস্ ডিজিজ বা ক্যালকেনিয়াল আপোফ্যাইসিস হলো গোড়ালির একটি প্রদাহজনিত সমস্যা, যা প্রধানত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে তাদের যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এই রোগে গোড়ালির হাড়ের (ক্যালকেনিয়াস) বৃদ্ধি কেন্দ্র, অর্থাৎ অ্যাপোফাইসিস, প্রদাহগ্রস্ত হয়ে ওঠে। এটি সাধারণত অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে হয় এবং যেসব শিশু খেলাধুলায় অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যদিও এটির নামের সাথে ডিসিজ শব্দটি আছে তবে মজার বিষয় এটি কোনো গুরুতর রোগ নয়, বরং এটি অতিরিক্ত চাপের ফলে সৃষ্ট একটি শারীরিক সমস্যা।
কারণ ও রিস্ক ফ্যাক্টর
সেভারস্ ডিজিজ সাধারণত অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে ঘটে। বিশেষ করে দৌড়-ঝাপ, লাফানো এবং অন্যান্য খেলাধুলায় অংশগ্রহণের কারণে এটি হতে পারে। কারণগুলো হলো:
- হাড়ের দ্রুত বৃদ্ধি: কৈশোরে হাড়ের বৃদ্ধি খুব দ্রুত ঘটে, কিন্তু মাংসপেশি ও টেন্ডন সেই হারে বৃদ্ধি পায় না। ফলে হাড় এবং টেন্ডনের মধ্যে দৈর্ঘ্যের ভারসাম্যের ব্যবধানে পেশি এবং টেন্ডনে অতিরিক্ত টান পড়ে।
- শারীরিক কাজ: খেলাধুলায় বিশেষত দৌড়ানো, লাফানো, এবং কঠিন পৃষ্ঠে খেললে গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যা ব্যথা আরও ত্বরান্বিত করে।
- অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন গোড়ালির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা প্রদাহের কারণ হতে পারে।
- অনুপযুক্ত জুতার ব্যবহার: অস্বস্তিকর বা সাপোর্টবিহীন জুতা পরা এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
লক্ষণসমূহ
সেভারস্ ডিজিজের প্রধান লক্ষণ হলো গোড়ালির ব্যথা এবং প্রদাহ। এর অন্যান্য লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- গোড়ালির পেছনে বা নিচে ব্যথা।
- হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় ব্যথার বৃদ্ধি।
- গোড়ালির চারপাশে ফোলা।
- আক্রান্ত পায়ের পেছনের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।
- গোড়ালি ভাঁজ করা বা সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করার সময় ব্যথা।
- হাঁটার সময় পায়ের আঙুলের দিকে বেশি চাপ দিয়ে হাঁটা।
- অনেক সময় পায়ে দুর্বলতা অনুভব করা।
রোগ নির্ণয়
সেভারস্ ডিজিজ নির্ণয়ের জন্য রোগীর হিস্টোরি এবং শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক প্রথমে রোগীর ব্যথার ইতিহাস জানতে চান এবং রোগীর পায়ের অবস্থার বিশদ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রয়োজনে এক্স-রে বা অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষার সাহায্যে এই অবস্থাকে নিশ্চিত করা যেতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
সেভারস্ ডিজিজের চিকিৎসা মূলত ব্যথা ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপর নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। চিকিৎসার প্রধান উপায়গুলো হলো:
শারীরিক বিশ্রাম:
শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে ফেলতে হবে, বিশেষ করে এমন ক্রিয়াকলাপ যা ব্যথা বাড়ায় (যেমন দৌড়ানো বা লাফানো)।
জুতা সংশোধন:
এমন জুতা পরিধান করতে হবে যা গোড়ালির সাপোর্ট দেয়। হিল প্যাড বা বিশেষ ধরনের ইনসোল ব্যবহার করে গোড়ালিতে চাপ কমানো যেতে পারে।
প্রদাহনাশক ওষুধ:
ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি:
সেভারস্ ডিজিজের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে মাংসপেশির স্ট্রেচিং এবং হিল কর্ডের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো হয়, যা ব্যথা কমাতে এবং প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক।
- স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ: অ্যাকিলিস টেন্ডন এবং কাফ মাসলের স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে গোড়ালির উপর চাপ কমবে।
- ম্যাসাজ এবং আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি: আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি প্রদাহ কমাতে কার্যকর, এবং মাসল ম্যাসাজ টিস্যুর রিলাক্সেশন ঘটাতে সাহায্য করে।
- ইমোবিলাইজেশন: ব্যথা যদি অনেক গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় এক্ষেত্রে গোড়ালিকে স্থির রাখতে প্লাস্টার বা কাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে প্রদাহ নিরাময় হয়।
বাসায় করণীয় ব্যায়াম
- অ্যাকিলিস টেন্ডন স্ট্রেচ: হাতের সাহায্যে দেয়ালে হেলান দিয়ে এক পা পেছনে রাখুন এবং গোড়ালি মাটিতে রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ১০-১৫ বার এই ব্যায়াম করুন।
- হিল রেইজ ব্যায়াম: একটি পায়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে গোড়ালিটি উঠানামা করুন। এটি ১০-১৫ বার করুন এবং প্রতিদিন ২-৩ সেট করুন।
সাধারণ পরামর্শ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে, তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা প্রয়োজন।
- উপযুক্ত জুতা পরা: এমন জুতা ব্যবহার করুন যা হিল সাপোর্ট দেয় এবং খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত।
- সঠিক বিশ্রাম: ব্যথা শুরু হলে অবিলম্বে বিশ্রাম নিন এবং শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত করুন।
উপসংহার
সেভারস্ ডিজিজ একটি অস্থায়ী সমস্যা হলেও সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। খেলাধুলায় সক্রিয় শিশুদের ক্ষেত্রে, পায়ের স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপির সাহায্যে এই অবস্থার কার্যকর সমাধান সম্ভব, যা শিশুদের পুনরায় তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে সহায়তা করবে।
আপনার আদরের সন্তানের সেভারস ডিজিজ চিকিৎসার জন্য আস্থা রাখতে পারেন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। এখানে নিয়মিত চেম্বার করেন ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। র্বাধুনিক এবং দলিল্ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এখন আপনার হাতের নাগালে প্রিয় শহর রংপুরে এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে।
0 Comments