বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি হলো মুখের ফেসিয়াল নার্ভের একটি তীব্র প্রদাহজনিত সমস্যা, যা মুখের এক পাশ দুর্বল করে দেয় বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড করে ফেলে। এই রোগ সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বেশি দেখা যায়। সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বেশিরভাগ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।...

লেখকঃ ডাঃ মাসুদ উর রহমান

October 25, 2024

বেলস্ পালসি কী?

বেলস্ পালসি হলো ৭ম ক্রেনিয়াল নার্ভের একটি তীব্র প্রদাহজনিত রোগ। এই নার্ভটি মুখের বিভিন্ন মাংসপেশিতে সংকেত পাঠানোর জন্য দায়ী, যা মুখের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই নার্ভটি প্রদাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন মুখের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায় বা প্যারালাইজড হয়ে যায়, ফলে মুখের এক পাশ বেঁকে যায়। এই অবস্থাকে সাধারণভাবে “ফেসিয়াল প্যারালাইসিস”ও বলা হয়। বেলস্ পালসি সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রীষ্ম থেকে শীতকালের সন্ধি সময়ে।

কারণ এবং রিস্ক ফ্যাক্টর

বেলস্ পালসি সৃষ্টির প্রধান কারণ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে বেশ কয়েকটি কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে। প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:

  • ভাইরাল সংক্রমণ: বেলস্ পালসি জন্য প্রধানত এক ধরনের ভাইরাস, বিশেষ করে হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, দায়ী বলে মনে করা হয়। এছাড়া ভাইরাল মেনিনজাইটিসও এই রোগের কারণ হতে পারে।
  • ঠাণ্ডা পরিবেশ: দীর্ঘ সময় ধরে ঠাণ্ডা পরিবেশে কাজ করলে বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে বেলস্ পালসি ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • মধ্য বা অন্তঃকর্ণের সমস্যা: কানের মধ্য বা অন্তঃকর্ণে কোনো সমস্যা থাকলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
  • আঘাত: মাথায় আঘাত, টেম্পোরাল হাড়ের ফাটল, বা দাঁত তোলার পরও এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
  • অপারেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার পর এই রোগ দেখা দিতে পারে।

লক্ষণসমূহ

বেলস্ পালসি লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে, এবং এগুলো সাধারণত একপাশের মুখে দেখা যায়। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • মুখের এক পাশ বেঁকে যাওয়া।
  • কুলি করলে মুখের এক পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়া।
  • এক চোখ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারা এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকা।
  • মুখের এক পাশে খাবার জমে থাকা এবং খাবার চিবানোর সময় অসুবিধা।
  • হাসতে বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
  • মাথা এবং ঘাড়ে ব্যথা।
  • দাঁত দেখানোর সময় মুখের এক পাশে দুর্বলতা।
  • খাবারের স্বাদ কমে যাওয়া বা না বুঝতে পারা।

রোগ নির্ণয়

বেলস্ পালসি রোগ নির্ণয়ের জন্য শারীরিক পরীক্ষা এবং রোগীর ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপি  চিকিৎসক মুখের নার্ভ ফাংশন পরীক্ষা করেন এবং রোগীর মুখের পেশিগুলোর কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করেন। প্রয়োজনে চিকিৎসক অন্যান্য পরীক্ষা যেমন MRI বা CT স্ক্যান করতে পারেন, বিশেষ করে যদি চিকিৎসক মনে করেন যে মস্তিষ্কের অন্যান্য সমস্যার কারণে প্যারালাইসিস হতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

এই রোগ হলে রোগীরা আতংকিত হয়ে পড়েন। অনেকে ভাবেন খারাপ বাতাস লেগেছে বা কারো অভিশাপ লেগেছে। তাই অনেকে কবিরাজ বা তান্ত্রিক দের কাছে গিয়ে ধরনা দেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল উদ্যোগ।

বেলস্ পালসির চিকিৎসা সাধারণত দ্রুত শুরু করতে হয়, যাতে রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়। চিকিৎসার প্রধান ধাপগুলো নিম্নরূপ:

০১ স্টেরয়েড ওষুধ:

প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড (যেমন: প্রেডনিসোন) ব্যবহার করা হয়। এটি মুখের নার্ভের কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

০২ অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ:

যদি ভাইরাস সংক্রমণের সন্দেহ থাকে, তাহলে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

০৩ চোখের সুরক্ষা:

যেহেতু বেলস্ পালসির কারণে চোখ পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে না, তাই চোখের সুরক্ষার জন্য আই ড্রপ বা চোখ ঢাকার জন্য প্যাচ ব্যবহার করা উচিত।

০৪ ফিজিওথেরাপি:

ফিজিওথেরাপি বেলস্ পালসির দ্রুত আরোগ্য লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফেসিয়াল মাসলের দুর্বলতা কাটাতে কিছু বিশেষ ধরনের ব্যায়াম করানো হয়, যা মুখের পেশিকে আবার সক্রিয় করে তোলে।

  • ফেসিয়াল ম্যাসাজ: মুখের মাসলে হালকা ম্যাসাজ করা হয় যাতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পেশিগুলো আবার শক্তিশালী হয়।
  • ইলেকট্রোথেরাপি: ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন পেশির শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

বেলস্ পালসির ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপি মুখের পেশিগুলোর কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে এবং রোগীর দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করে। মুখের পেশির স্ট্রেচিং, ম্যাসাজ, এবং ইলেকট্রোথেরাপির মাধ্যমে মুখের নার্ভ এবং পেশিগুলোর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

বাসায় করণীয় সাধারণ পরামর্শ

  • ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা: ঠাণ্ডা বাতাস বা এসির ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকতে হবে, কারণ ঠাণ্ডা বাতাস বেলস্ পালসির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শরীরকে ঠিকমতো বিশ্রাম দিলে আরোগ্য দ্রুত ঘটে।
  • মুখের ব্যায়াম: নিয়মিত মুখের ব্যায়াম করুন যাতে মুখের পেশিগুলো দুর্বল না হয়।

উপসংহার

বেলস্ পালসি একটি অস্থায়ী অবস্থা হলেও এটি রোগীর জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, এবং নিজের প্রতি যত্ন নিয়ে চললে বেশিরভাগ রোগী এক থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বেলস্ পালসির সর্বাধুনিক এবং দলিল্ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এখন আপনার হাতের নাগালে প্রিয় শহর রংপুরে এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। এখানে নিয়মিত চেম্বার করেন ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। তাই রংপুরে বেলস্ পালসির চিকিৎসায় আস্থা রাখুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে।

Masud Ur Rahman best physiotherapist

ডাঃ মাসুদ উর রহমান

বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় আমি একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আমার মূল লক্ষ্য হলো আপনাকে সুস্থভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করা এবং আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য ব্লগ

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোকের পর যে প্যারালাইসিস, কথা বলার সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসা। এই ব্লগে স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ, তাৎক্ষণিক করণীয়, প্রতিরোধের উপায় এবং ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস, যা ডিস্ক হার্নিয়েশন নামেও পরিচিত, একটি প্রচলিত সমস্যা যা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ডিস্ক প্রলাপসের কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং রোগীকে দেওয়ার সাধারণ পরামর্শ আলোচনা করব।

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের একটি ক্ষয়জনিত সমস্যা, যা আমাদের চল্লিশোর্ধ বয়সীদের মাঝে খুবই সাধারণ। এই রোগে ঘাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বাহু, হাত ও আঙুলেও ব্যথা ও অবশ ভাব হতে পারে। সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো কেবল খেলোয়াড়দের নয়, যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে যারা বারবার হাতের মুভমেন্ট করে থাকেন। কীভাবে এই সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং এর চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কীভাবে উপশম পেতে পারেন তা জানুন।

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পায়ের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত ব্যথা? পা ভারি ভারি বা অবশ লাগছে? হয়তো এটি ডিস্ক প্রলাপস নয়, বরং পাইরিফরমিস সিনড্রোম হতে পারে। এই সমস্যা কীভাবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে উপশম করা সম্ভব তা জানুন।

মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম: এক রহস্যময় ব্যথার কারণ

মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম: এক রহস্যময় ব্যথার কারণ

অনেক সময় আমরা ব্যথার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাই না। ঘাড়, কাঁধ বা কোমরের এই ব্যথা এক্সরে বা এম.আর.আই.-তে ধরা পড়ে না, কিন্তু সেই ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কষ্ট দেয়। মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম এমনই একটি রোগ, যা নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

Pin It on Pinterest

Share This