ডিস্ক প্রলাপস কি?
ডিস্ক প্রলাপস হল একটি শারীরিক সমস্যা, যেখানে মেরুদণ্ডের কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্কের জেলির মতো অংশ বের হয়ে যায়। ডিস্ক হলো দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী একটি বিশেষ পদার্থ, যা মেরুদণ্ডের হাড়কে অপর একটি হাড় থেকে বিভক্ত রাখে, যাতে একটির সঙ্গে আরেকটির ঘর্ষণ না লাগে এবং এটি স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে। ডিস্কের ভেতরে থাকে নিউক্লিয়াস পালপোসাস, যা জেলির মতো নরম এবং বাইরের অংশে থাকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস। যখন এই জেলির মতো অংশটি বের হয়ে পার্শ্ববর্তী নার্ভ বা স্নায়ুতে চাপ দেয়, তখন ব্যথা হাত বা পায়ের নিচ পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপসের প্রকারভেদ
ডিস্ক প্রলাপস বা ডিস্ক হার্নিয়েশন সাধারণত ৪ প্রকারের হয়ে থাকে:
- ডিস্ক ডিজেনারেশন: ডিস্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে এবং এটি দুর্বল হয়ে যায়।
- ডিস্ক প্রট্রুশন: ডিস্কের মধ্যবর্তী অংশ কিছুটা বের হয়ে আসে, কিন্তু অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস intact থাকে।
- এক্সট্রুশন: নিউক্লিয়াস পালপোসাস ডিস্কের বাইরের অংশে বের হয়ে আসে।
- সিকুয়েসট্রুশন: বের হওয়া অংশ সম্পূর্ণভাবে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পেছনে পেট্রিশিয়াল স্থানে থাকে।
ডিস্ক প্রলাপসের কারণ
ডিস্ক প্রলাপসের কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যেমন:
- বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিস্কের নমনীয়তা কমে যায় এবং এটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
- অতিরিক্ত চাপ: ভারী জিনিস তোলা বা শারীরিকভাবে কঠোর কাজ করলে ডিস্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
- অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা: শরীরচর্চার অভাব এবং দুর্বল পেশী ডিস্কের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- মৌলিক অবস্থান: দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা ভুলভাবে বসে কাজ করা ডিস্কে চাপ সৃষ্টি করে।
- আঘাত: দুর্ঘটনার কারণে পিঠে আঘাত লাগলে ডিস্ক প্রলাপস হতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপসের উপসর্গ
ডিস্ক প্রলাপসের উপসর্গ বিভিন্ন রকম হতে পারে, যা সাধারণত নিম্নলিখিত:
- ব্যথা: কোমর, ঘাড় বা পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
- রেডিয়েটিং পেইন: ব্যথা কোমরের নিচের অংশ থেকে পায়ে পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
- ঝিনঝিন বা অবশ ভাব: হাত বা পায়ে ঝিনঝিন, অবশ ভাব বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
- পায়ের দুর্বলতা: হাঁটার সময় পায়ে দুর্বলতা অনুভব হতে পারে।
- শারীরিক কার্যকলাপে অসুবিধা: কাজ করতে গেলে বা হাঁটলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, যা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ডিস্ক প্রলাপসের চিকিৎসা
ডিস্ক প্রলাপসের চিকিৎসায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
০১ বিশ্রাম:
রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে যেতে হবে এবং স্বাভাবিক ফার্ম বিছানা ব্যবহার করতে হবে।
০২ মেডিসিন:
ব্যথা কমানোর জন্য এনএসএআইডি (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs) দেওয়া যেতে পারে।
০৩ ফিজিওথেরাপি:
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগীর পেশী এবং টেন্ডনের শক্তিশালীকরণ, নমনীয়তা বৃদ্ধি এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করা যায়। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীর জন্য বিশেষ ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করেন।
- আইস এবং হট থেরাপি: ব্যথা কমাতে বরফ এবং গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ম্যাসাজ থেরাপি: ম্যাসাজ থেরাপি ব্যথা কমাতে এবং পেশীর রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- ইলেকট্রোথেরাপিঃ একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ডিস্ক প্রলাপ্সের সঠিক টাইপ এবং সমস্যা সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোথেরাপি সাজেস্ট করবেন যা রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো হয়।
সাধারণ পরামর্শ
ডিস্ক প্রলাপসের আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ রয়েছে:
- ভারী জিনিস উত্তোলন এড়িয়ে চলুন: ভারী জিনিস তোলার চেষ্টা করবেন না, কারণ এটি ডিস্কে অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
- সঠিক শরীরী অবস্থান বজায় রাখুন: দীর্ঘ সময় বসে থাকার সময়ে সঠিক শরীরী অবস্থান বজায় রাখতে চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ফিজিওথেরাপির নির্দেশিত ব্যায়ামগুলি নিয়মিত করুন, যাতে পেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন যাতে শরীরের পেশী এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি উপসর্গগুলি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।
উপসংহার
ডিস্ক প্রলাপস একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। ডিস্ক প্রলাপ্সজনিত ব্যথা থেকে উত্তরণের জন্য ভিজিট করুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। রংপুর শহরের সেরা এবং আধুনিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার এটি। এখানে নিয়মিত চেম্বার করেন ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক।
Very informative about disc prolapse.