সেভারস্ ডিজিজ: বয়ঃসন্ধিকালীন গোড়ালি ব্যথার মূল কারণ ও এর চিকিৎসা

সেভারস্ ডিজিজ, যা ক্যালকেনিয়াল আপোফ্যাইসিস নামে পরিচিত। এটি তরুণদের মধ্যে একটি প্রচলিত সমস্যা, যা প্রায়শই খেলাধুলায় সক্রিয় থাকা শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের প্রভাবিত করে। এই রোগটি গোড়ালির প্রদাহ এবং ব্যথা সৃষ্টি করে, যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ...

লেখকঃ ডাঃ মাসুদ উর রহমান

October 25, 2024

সেভারস্ ডিজিজ কী?

সেভারস্ ডিজিজ বা ক্যালকেনিয়াল আপোফ্যাইসিস হলো গোড়ালির একটি প্রদাহজনিত সমস্যা, যা প্রধানত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে তাদের যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এই রোগে গোড়ালির হাড়ের (ক্যালকেনিয়াস) বৃদ্ধি কেন্দ্র, অর্থাৎ অ্যাপোফাইসিস, প্রদাহগ্রস্ত হয়ে ওঠে। এটি সাধারণত অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে হয় এবং যেসব শিশু খেলাধুলায় অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যদিও এটির নামের সাথে ডিসিজ শব্দটি আছে তবে মজার বিষয় এটি কোনো গুরুতর রোগ নয়, বরং এটি অতিরিক্ত চাপের ফলে সৃষ্ট একটি শারীরিক সমস্যা।

কারণ ও রিস্ক ফ্যাক্টর

সেভারস্ ডিজিজ সাধারণত অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে ঘটে। বিশেষ করে দৌড়-ঝাপ, লাফানো এবং অন্যান্য খেলাধুলায় অংশগ্রহণের কারণে এটি হতে পারে। কারণগুলো হলো:

  • হাড়ের দ্রুত বৃদ্ধি: কৈশোরে হাড়ের বৃদ্ধি খুব দ্রুত ঘটে, কিন্তু মাংসপেশি ও টেন্ডন সেই হারে বৃদ্ধি পায় না। ফলে হাড় এবং টেন্ডনের মধ্যে দৈর্ঘ্যের ভারসাম্যের ব্যবধানে পেশি এবং টেন্ডনে অতিরিক্ত টান পড়ে।
  • শারীরিক কাজ: খেলাধুলায় বিশেষত দৌড়ানো, লাফানো, এবং কঠিন পৃষ্ঠে খেললে গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যা ব্যথা আরও ত্বরান্বিত করে।
  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন গোড়ালির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা প্রদাহের কারণ হতে পারে।
  • অনুপযুক্ত জুতার ব্যবহার: অস্বস্তিকর বা সাপোর্টবিহীন জুতা পরা এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।

লক্ষণসমূহ

সেভারস্ ডিজিজের প্রধান লক্ষণ হলো গোড়ালির ব্যথা এবং প্রদাহ। এর অন্যান্য লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • গোড়ালির পেছনে বা নিচে ব্যথা।
  • হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় ব্যথার বৃদ্ধি।
  • গোড়ালির চারপাশে ফোলা।
  • আক্রান্ত পায়ের পেছনের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • গোড়ালি ভাঁজ করা বা সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করার সময় ব্যথা।
  • হাঁটার সময় পায়ের আঙুলের দিকে বেশি চাপ দিয়ে হাঁটা।
  • অনেক সময় পায়ে দুর্বলতা অনুভব করা।

রোগ নির্ণয়

সেভারস্ ডিজিজ নির্ণয়ের জন্য রোগীর হিস্টোরি এবং শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক প্রথমে রোগীর ব্যথার ইতিহাস জানতে চান এবং রোগীর পায়ের অবস্থার বিশদ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রয়োজনে এক্স-রে বা অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষার সাহায্যে এই অবস্থাকে নিশ্চিত করা যেতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

সেভারস্ ডিজিজের চিকিৎসা মূলত ব্যথা ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপর নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। চিকিৎসার প্রধান উপায়গুলো হলো:

শারীরিক বিশ্রাম:

শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে ফেলতে হবে, বিশেষ করে এমন ক্রিয়াকলাপ যা ব্যথা বাড়ায় (যেমন দৌড়ানো বা লাফানো)।

জুতা সংশোধন:

এমন জুতা পরিধান করতে হবে যা গোড়ালির সাপোর্ট দেয়। হিল প্যাড বা বিশেষ ধরনের ইনসোল ব্যবহার করে গোড়ালিতে চাপ কমানো যেতে পারে।

প্রদাহনাশক ওষুধ:

ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিজিওথেরাপি:

সেভারস্ ডিজিজের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে মাংসপেশির স্ট্রেচিং এবং হিল কর্ডের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো হয়, যা ব্যথা কমাতে এবং প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক।

  • স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ: অ্যাকিলিস টেন্ডন এবং কাফ মাসলের স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে গোড়ালির উপর চাপ কমবে।
  • ম্যাসাজ এবং আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি: আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি প্রদাহ কমাতে কার্যকর, এবং মাসল ম্যাসাজ টিস্যুর রিলাক্সেশন ঘটাতে সাহায্য করে।
  • ইমোবিলাইজেশন: ব্যথা যদি অনেক গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় এক্ষেত্রে গোড়ালিকে স্থির রাখতে প্লাস্টার বা কাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে প্রদাহ নিরাময় হয়।

বাসায় করণীয় ব্যায়াম

  • অ্যাকিলিস টেন্ডন স্ট্রেচ: হাতের সাহায্যে দেয়ালে হেলান দিয়ে এক পা পেছনে রাখুন এবং গোড়ালি মাটিতে রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ১০-১৫ বার এই ব্যায়াম করুন।
  • হিল রেইজ ব্যায়াম: একটি পায়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে গোড়ালিটি উঠানামা করুন। এটি ১০-১৫ বার করুন এবং প্রতিদিন ২-৩ সেট করুন।

সাধারণ পরামর্শ

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে, তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা প্রয়োজন।
  • উপযুক্ত জুতা পরা: এমন জুতা ব্যবহার করুন যা হিল সাপোর্ট দেয় এবং খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত।
  • সঠিক বিশ্রাম: ব্যথা শুরু হলে অবিলম্বে বিশ্রাম নিন এবং শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত করুন।

উপসংহার

সেভারস্ ডিজিজ একটি অস্থায়ী সমস্যা হলেও সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। খেলাধুলায় সক্রিয় শিশুদের ক্ষেত্রে, পায়ের স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপির সাহায্যে এই অবস্থার কার্যকর সমাধান সম্ভব, যা শিশুদের পুনরায় তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে সহায়তা করবে।

আপনার আদরের সন্তানের সেভারস ডিজিজ চিকিৎসার জন্য আস্থা রাখতে পারেন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। এখানে নিয়মিত চেম্বার করেন ডাঃ মাসুদ উর রহমান। যিনি বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। র্বাধুনিক এবং দলিল্ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এখন আপনার হাতের নাগালে প্রিয় শহর রংপুরে এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টারে।

Masud Ur Rahman best physiotherapist

ডাঃ মাসুদ উর রহমান

বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় আমি একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আমার মূল লক্ষ্য হলো আপনাকে সুস্থভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করা এবং আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য ব্লগ

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোকের পর যে প্যারালাইসিস, কথা বলার সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসা। এই ব্লগে স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ, তাৎক্ষণিক করণীয়, প্রতিরোধের উপায় এবং ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস, যা ডিস্ক হার্নিয়েশন নামেও পরিচিত, একটি প্রচলিত সমস্যা যা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ডিস্ক প্রলাপসের কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং রোগীকে দেওয়ার সাধারণ পরামর্শ আলোচনা করব।

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের একটি ক্ষয়জনিত সমস্যা, যা আমাদের চল্লিশোর্ধ বয়সীদের মাঝে খুবই সাধারণ। এই রোগে ঘাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বাহু, হাত ও আঙুলেও ব্যথা ও অবশ ভাব হতে পারে। সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি হলো মুখের ফেসিয়াল নার্ভের একটি তীব্র প্রদাহজনিত সমস্যা, যা মুখের এক পাশ দুর্বল করে দেয় বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড করে ফেলে। এই রোগ সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বেশি দেখা যায়। সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বেশিরভাগ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো কেবল খেলোয়াড়দের নয়, যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে যারা বারবার হাতের মুভমেন্ট করে থাকেন। কীভাবে এই সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং এর চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কীভাবে উপশম পেতে পারেন তা জানুন।

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পায়ের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত ব্যথা? পা ভারি ভারি বা অবশ লাগছে? হয়তো এটি ডিস্ক প্রলাপস নয়, বরং পাইরিফরমিস সিনড্রোম হতে পারে। এই সমস্যা কীভাবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে উপশম করা সম্ভব তা জানুন।

Pin It on Pinterest

Share This