স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন: সুস্থ জীবনে ফেরার উপায়, জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোকের পর যে প্যারালাইসিস, কথা বলার সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসা। এই ব্লগে স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ, তাৎক্ষণিক করণীয়, প্রতিরোধের উপায় এবং ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।...

লেখকঃ ডাঃ মাসুদ উর রহমান

October 25, 2024

স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত জটিলতা যা প্রায়ই মস্তিষ্কের একাংশের কার্যকারিতা হারায়। এটি শুধু রোগী নয়, পুরো পরিবারের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্ট্রোকের ফলে বেশিরভাগ রোগী শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, যার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়া সহজ নয়। এই প্রক্রিয়ায় ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা স্ট্রোকের লক্ষণ, জরুরি পদক্ষেপ, প্রতিরোধ, এবং পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

স্ট্রোক কি ধরনের অসুখ?

স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ, যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ কাজ বন্ধ করে দেয়। স্ট্রোক মূলত দুটি কারণে হতে পারে: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচলের অভাব। এই অবস্থাটি হার্টের সমস্যা নয়, বরং মস্তিষ্কের একটি জটিলতা।

স্ট্রোক এপেক্স ফিজিওথেরাপি

স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ

স্ট্রোক হলে সাধারণত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

  • শরীরের এক পাশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • তীব্র মাথাব্যথা বা বমি।
  • আচমকা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • কথা জড়িয়ে আসা বা কথা বলতে অসুবিধা।
  • হাঁটতে বা চলাচল করতে সমস্যায় পড়া।

স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে স্ট্রোকের ধরন বোঝা জরুরি, কারণ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বা রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকতে পারে এবং দুটির চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন।

স্ট্রোক পরবর্তী জরুরি চিকিৎসা (অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে)

অজ্ঞান অবস্থায় রোগীকে সামাল দিতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, যেমন:

  • শ্বাসপ্রশ্বাস, শ্বাসনালী এবং রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখা।
  • রোগীকে বালিশ ছাড়া কাত করে শোয়ানো।
  • চোখের যত্ন নিতে হবে
  • মূত্রথলির সঠিক যত্ন নিতে হবে।
  • প্রয়োজনমতো ক্যাথেটার দিয়ে মূত্রত্যাগের ব্যবস্থা।

স্ট্রোকের সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, রোগী অজ্ঞান হলে বা স্ট্রোকের সঙ্গে অন্যান্য রোগ (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) থাকলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন।

স্ট্রোক চিকিৎসার লক্ষ্য

স্ট্রোক চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলোঃ

  • রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি কমানো,
  • শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা, এবং
  • পুনরায় স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করা।

স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস হলে বা মুখ বেঁকে গেলে কিংবা কথা বলতে অসুবিধা হলে কী করা যায়?

 সারা পৃথিবীতে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা সমন্বয় পদ্ধতিতে হয় এক্ষেত্রে উল্লিখিত চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। 

  • নিউরোলজিস্ট /নিউরোসার্জন 
  • ফিজিওথেরাপিষ্ট

 বাংলাদেশে স্ট্রোকের হার প্রতি হাজারে ৫-১২। আর প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

স্ট্রোক পরবর্তী ফিজিওথেরাপি শুরু করার সঠিক সময়

স্ট্রোক পরবর্তী তিন দিনের মধ্যেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যায়। চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা সম্ভব, রোগীর জন্য ততই মঙ্গলজনক। প্রায়শই সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেলে রোগীরা প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। ফিজিওথেরাপি মূলত রোগীর পেশীর শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক স্থিতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কতদিন প্রয়োজন?

ফিজিওথেরাপি কতদিন চালানো উচিত তা নির্ভর করে রোগীর আরোগ্য লাভের অগ্রগতির উপর। সাধারণত রোগী যতদিন পর্যন্ত নিজে থেকে চলাফেরা করতে না পারেন, ততদিন ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সময়মতো এবং নিয়মিত চিকিৎসা রোগীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য সহায়ক হতে পারে।

ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব:

পুনর্বাসনের একটি অপরিহার্য ধাপ । ফিজিওথেরাপি স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • ফিজিওথেরাপি শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে,
  • ফলে রোগীরা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন। এছাড়া ও
  • ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা রোগীর শারীরিক সক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজে সমর্থ করে তুলতে তাদের সাহায্য করেন।
স্ট্রোক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

স্ট্রোক প্রতিরোধে কিছু সচেতনতা এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে:

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ মাপা এবং ১৩০/৮০ এর নিচে রাখা।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: HbA1c ৭%-এর নিচে রাখা, কারণ দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ: খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমিয়ে রাখা।
  • ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তাই ধূমপান বন্ধ করলে ঝুঁকি কমে আসে।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা: সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা।
  • মদ্যপান পরিহার করা এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: ফলমূল, শাকসবজি খাওয়া এবং
  • খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো।

সারসংক্ষেপ:

স্ট্রোক একটি মারাত্মক জটিল রোগ, যা সঠিক চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের অভাবে রোগীর জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। স্ট্রোক হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও যথাযথ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পুনর্বাসন শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে উল্লিখিত পরামর্শগুলি রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সহায়ক হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে ও রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।

স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস প্রতিরোধে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ভিজিট করুন এপেক্স ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

Masud Ur Rahman best physiotherapist

ডাঃ মাসুদ উর রহমান

বাত-ব্যথা,প্যারালাইসিস, ঘাড় /কোমর/ হাটু/ গোড়ালি ব্যথা, হাত- পা ঝিনঝিন / অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বাকা হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা / আঘাত জনিত ব্যথা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় আমি একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। আমার মূল লক্ষ্য হলো আপনাকে সুস্থভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করা এবং আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য ব্লগ

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস: ঘাড় এবং কোমড়ে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ পথ

ডিস্ক প্রলাপস, যা ডিস্ক হার্নিয়েশন নামেও পরিচিত, একটি প্রচলিত সমস্যা যা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ডিস্ক প্রলাপসের কারণ, উপসর্গ, চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং রোগীকে দেওয়ার সাধারণ পরামর্শ আলোচনা করব।

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস: ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত সমস্যা ও তার এর প্রতিকার

সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের একটি ক্ষয়জনিত সমস্যা, যা আমাদের চল্লিশোর্ধ বয়সীদের মাঝে খুবই সাধারণ। এই রোগে ঘাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বাহু, হাত ও আঙুলেও ব্যথা ও অবশ ভাব হতে পারে। সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি ( মুখ বাকা হয়ে যাওয়া) : ফেসিয়াল নার্ভের সমস্যা ও দ্রুত নিরাময়ের উপায়

বেলস্ পালসি হলো মুখের ফেসিয়াল নার্ভের একটি তীব্র প্রদাহজনিত সমস্যা, যা মুখের এক পাশ দুর্বল করে দেয় বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড করে ফেলে। এই রোগ সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বেশি দেখা যায়। সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বেশিরভাগ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো: কেবল খেলোয়াড় নয়, আপনিও হতে পারেন ভুক্তভোগী—জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও সহজ চিকিৎসা

টেনিস এলবো কেবল খেলোয়াড়দের নয়, যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে যারা বারবার হাতের মুভমেন্ট করে থাকেন। কীভাবে এই সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং এর চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কীভাবে উপশম পেতে পারেন তা জানুন।

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পাইরিফরমিস সিনড্রোম: এটি কেন হয় এবং কীভাবে ফিজিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে

পায়ের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত ব্যথা? পা ভারি ভারি বা অবশ লাগছে? হয়তো এটি ডিস্ক প্রলাপস নয়, বরং পাইরিফরমিস সিনড্রোম হতে পারে। এই সমস্যা কীভাবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে উপশম করা সম্ভব তা জানুন।

মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম: এক রহস্যময় ব্যথার কারণ

মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম: এক রহস্যময় ব্যথার কারণ

অনেক সময় আমরা ব্যথার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাই না। ঘাড়, কাঁধ বা কোমরের এই ব্যথা এক্সরে বা এম.আর.আই.-তে ধরা পড়ে না, কিন্তু সেই ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কষ্ট দেয়। মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম এমনই একটি রোগ, যা নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

Pin It on Pinterest

Share This